English: Click here to read this article in English.
সারমর্ম :
- রাইট ইস্যুটি মূলত এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোনো সংস্থা বাজার থেকে অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করে থাকে |
- একজন বিনিয়োগকারীকে উচিত ডিসকাউন্টের বাইরের দিক গুলি সম্পর্কে সন্ধান করা । অতিরিক্ত অংশ নেওয়ার জন্য তিনি অর্থ প্রদান করছেন, তিনি যদি কেবল কোম্পানির কর্মক্ষমতা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হন তবে তার রাইট ইস্যু সাবস্ক্রাইব করা উচিত।
- রাইট ইস্যুর ফলে শেয়ারের সংখ্যা বেশি হয়ে যায়, যার কারণে EPS, প্রতি শেয়ার মেট্রির বুক ভ্যালু হ্রাস পাচ্ছে।
- প্রোমোটার যদি রাইটস ইস্যুগুলিতে অংশ নিয়ে থাকেন তবে এটি ইতিবাচক লক্ষণ হতে পারে।
রাইটস ইস্যু হলো এমন এক প্রকার কর্পোরেট ক্রিয়াকলাপ যা কোনও সংস্থা তার বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের নতুন সিকিওরিটি জারি করে মূলধন বাড়ানোর প্রচেষ্টা করে থাকে
সম্প্রতি আমরা সকলেই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের রাইট ইস্যু সম্পর্কে শুনেছি। ভারতীয় ক্যাপিটাল মার্কেটের বৃহত্তম ইক্যুইটি তহবিল সংগ্রহ, ৫৩,১২৫ কোটির লক্ষমাত্রা নিয়েছে |
শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী হিসাবে, আপনি রাইট ইস্যু সমস্যাটি সম্পর্কে অবশ্যই জানতে চাইতে পারেন |
ঠিক আছে আপনার অনুসন্ধান এখানেই শেষ হবে কারণ আমরা বিশদে রাইট ইস্যু সংক্রান্ত ধারণাটি নিয়ে আলোচনা করব।
রাইট ইস্যু কি ?
রাইট ইস্যুটি মূলত এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোনো সংস্থা অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করে থাকে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের সেই সংস্থার অতিরিক্ত নতুন শেয়ার কেনার জন্য একটি আমন্ত্রণ।
রাইট ইস্যুতে, নতুন শেয়ার ইস্যু করা হয় এবং বর্তমান বাজারদর থেকে কম দামে সংস্থার বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের নতুন করে শেয়ার কেনার আমন্ত্রণ করা হয় ।
বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার রয়েছে তবে তাদের হোল্ডিংয়ের অনুপাতে নতুন জারি করা শেয়ারটি সাবস্ক্রাইব করার উপর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না |
সাবস্ক্রিপশনের রেকর্ডের ডেট এবং এক্স ডেট পরীক্ষা করতে হবে। যার সময় অতিক্রন্ত হলে সাবস্ক্রিপশনটির বিষয়ক কোনো ভ্যালিডিটি থাকে না |
উদাহরণ :
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১:১৫ অনুপাতের মধ্যে রাইট ইস্যুর প্রস্তাব দিয়েছে।
এর অর্থ, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারগণ রেকর্ডের তারিখ অনুযায়ী যোগ্য শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা প্রতি ১৫ টি ইক্যুইটি শেয়ারের জন্য ১ টি ইক্যুইটি শেয়ারের সদস্যতা নিতে পারবেন। রাইট ইস্যুটির দাম ১২৫৭ টাকা . এটি কোম্পানির শেয়ারের দামের তুলনায় প্রায় ১৪% ছাড়। ১৪৬৬ এপ্রিল ৩০ , ২০২০ পর্যন্ত।
ধরা যাক কোনও বিনিয়োগকারী এরই মধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৯০ টি শেয়ারের ১৪০০ টাকায় মালিকানাধীন রয়েছে।
আমরা জানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১:১৫ অনুপাতের রাইট ইস্যুর প্রস্তাব দিয়েছে। এর অর্থ একজন বিনিয়োগকারী বর্তমানে তার মালিকানাধীন প্রতি ১৫ টি শেয়ারের জন্য ১ ছাড়যুক্ত শেয়ার কিনতে পারে। ফলস্বরূপ, বিনিয়োগকারী ৬ টি (৯০ /১৫ ) আরও শেয়ার কিনতে পারে প্রতি শেয়ার ১২৫৭ টাকার বিনিময়ে ।
সুতরাং এখন মোট ৯৬ টি শেয়ারের জন্য তার ব্যয় হবে:
(৯০ x ১৪০০ টাকা ) + (৬ x ১২৫৭ টাকা )
= ১,৩৩,৪৫২ টাকা |
সুতরাং এখন একটি শেয়ারের জন্য তার দাম পড়বে ১,৩৩,৪৫২ / ৯৬
= ১,৩৯১ টাকা
সুতরাং এখন বিনিয়োগকারীর নিজের ৯০ টি এবং রাইট ইস্যুর মাধ্যমে প্রাপ্ত ৬ টি শেয়ারের দাম 1,391 টাকা এবং সমাপ্তির দাম ১,৪৬৬ টাকা।
রাইট ইস্যুতে সাবস্ক্রাইব করা কি প্রয়োজনীয়?
যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো সংস্থার শেয়ার হোল্ড করে থাকেন যে সংস্থা রাইট ইস্যুর প্রস্তাব এনেছে সেই ক্ষেত্রে ৩ টি বিকল্প রয়েছে |
প্রথম বিকল্প – এক্ষেত্রে রাইট ইস্যুটির জন্য কেউ ১২৫৭ টাকায় আবেদন করতে পারবেন যখন সমাপনী মূল্য ছিল ১৪৬৬ টাকা |
দ্বিতীয় বিকল্প – কেউ হয়তো রাইট ইস্যুতে আবেদন করতে চায় না তাই এক্সারসাইজ করে না |
তৃতীয় বিকল্প – একজন তার রাইট ইস্যুটিকে অন্য কারও কাছে বিক্রি করে থাকতে পারে এ রেনাউনসিঙ অফ রাইটস নামেও পরিচিত।
সুতরাং এই ক্ষেত্রে রেনাউন্সিঙের অর্থ হলো – রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের পুরানো হোল্ডার হওয়ার কারণে আপনি রাইট ইস্যু ক্রয় করার যোগ্য কিন্তু এই ক্ষেত্রে আপনি তা না ক্রয় করে এমন কারুর কাছে রাইট ইস্যু ক্রয়ের ক্ষমতা হস্তান্তর / বিক্রয় করে দিতে পারেন যিনি হয়তো রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কোনো শেয়ারের মালিক নন অথবা তার কাছে রাইট ইস্যু ক্রয়ের ক্ষমতা নাই | এই ক্ষেত্রে আপনি ১২৫৭ টাকা দামে ৬ টি শেয়ার ক্রয়ের ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিতে পারেন |
সুতরাং এই ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের যে ছাড় ১৪% আপনি পাওয়ার যোগ্য সেটি রাইট ইস্যুটি অন্য কোনো ব্যক্তিকে হস্তান্তরের মাধ্যমে সেই ব্যক্তিকে বাজার থেকে ১০% রাইট ইস্যুতে অ্যাপ্লাই করার সুযোগ করে দেয়ার সাথে রাইট ইস্যুর ত্যাগ করার মূল্য হিসাবে মোট ভ্যালুর ৪% উপার্জন করতে সক্ষম হবেন |
সুতরাং এক্ষেত্রে ১২৫৭ টাকার যে রাইট ইস্যুইটি আপনি হস্তান্তর করলেন সেই ৬ টি শেয়ারের কমিশন হিসাবে ৩০১.৬৮ টাকা উপার্জন করলেন |
সুতরাং এখন আপনার ৯০ টি শেয়ারের জন্য ১৪০০ টাকায় হোল্ডিং ব্যয় ১,২৬,০০০ টাকা ছিল তাই এখন আপনার ব্যয় শেয়ার প্রতি ১৩৯৬.৬৫ টাকাতে নেমে গেছে । সুতরাং আপনি যদি রাই ইস্যু প্রয়োগ করতেন তবে আপনার ব্যয়টি হ’ল ১৩৯১ টাকাতে নেমে যেত তবে যেহেতু আপনি ত্যাগ করেছেন তাই মূল্য কেবল ১৩৯৬.৬৫ টাকায় নেমে এসেছে।
সুতরাং, এই ক্ষেত্রে, আপনি ছাড় দেওয়ার চেয়ে অধিকারগুলিতে সাবস্ক্রাইব করে আরও ছাড় পেতে পারতেন।
কোনো সংস্থা কেন রাইট ইস্যুর সুবিধা নিয়ে আসে ?
——————————-Infographics——————————————
সংস্থাগুলি তাদের তহবিল বাড়ানোর তাগিদ থেকেই শেয়ারের রাইট ইস্যু অফার করে থাকে –
- ব্যবসায়িক বৃদ্ধি এবং প্রসার
- নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ করার জন্য
- ঋণ পরিশোধ করার জন্য
- অন্য কোনো কোম্পানিকে ক্রয় ((অধিগ্রহণ)) করার তাগিদে অর্থ একত্রীকরণ
একজন বিনিয়োগকারীর অবশ্যই উচিত কোনো রাইট ইস্যুর অধিকার প্রয়োগের পূর্বে কোম্পানি কেন রাইট ইস্যু অফার করেছে তা বিবেচনা করা | তারও নিশ্চিত হওয়া উচিত যে সংস্থাটির দৃঢ় উপার্জনযোগ্য দৃশ্যমানতা এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে।
এক্ষেত্রে – রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মতো, সংস্থা ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য মূলধন জোগাড় করছে, ব্যালেন্স শীট ডেলিভারেজিং।
রাইট ইস্যুর সুবিধা :
- রাইট ইস্যুর মাধ্যমে কোনো কোম্পানি তার শেয়ার হোল্ডারদের ডিসকাউন্ট দামে নতুন শেয়ার অফার করে | সুতরাগ একজন শেয়ার হোল্ডারের কাছে নিজের পোর্টফোলিওতে কম দামে বেশি সংখক শেয়ার কেনার একটা সুযোগ – যার মাধ্যমে সামগ্রিক হোল্ডিং শেয়ারের গড় দামের মধ্যে হ্রাস লক্ষ্য করা যায় |
- কোম্পানির দিক থেকে দেখতে গেলে – ব্যাংকের উচ্চ ঋণের চাপ মুক্ত হয়ে নতুন করে রাইট ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করার সুযোগ |
রাইট ইস্যুর অসুবিধা :
- যদি শেয়ারহোল্ডার রাইট ইস্যুতে সাবস্ক্রাইব না করে তবে সংস্থাটি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে।
- কোম্পানির প্রোমোটারগণ FPO র মাধ্যমেও অধিক অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন , এই ক্ষেত্রে বিদ্যমান ইক্যুইটি মানের অনুপাতে অধিকার বাড়াতে পারে।
- যদি একটি সংস্থা যার ব্যালেন্স শিট বেশ শক্তিশালী এই ক্ষেত্রে সংস্থা শেয়ারের রাইট ইস্যু যদি অফার করে থাকে – তবে তা সেই নির্দিষ্ট সংস্থার জন্য নেতিবাচক বাজারের মনোভাব তৈরি করতে চলেছে। ধারণা করা হয় যে সংস্থাটি তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য লড়াই করছে।
- রাইট ইস্যুতে ইক্যুইটির হ্রাস পাওয়ার ফলে এইভাবে যারা রাইটগুলিতে সাবস্ক্রাইব করতে চান না নতুন করে শেয়ারের বরাদ্দের কারণে সেই সকল ব্যক্তির হোল্ডিংয়ের শতাংশ হ্রাস পায় |
- হোল্ডারদের অ্যাকাউন্টে রাইটস শেয়ার জারি করা এবং হস্তান্তর করার মধ্যে একটি সময়ের ব্যবধান রয়েছে সুতরাং অধিকারের শেয়ার বিক্রি করার সময় একই শতাংশ ছাড়টি পাওয়া যাবে না।
কিভাবে রাইট ইস্যুর জন্য আবেদন করা যায় ?
রাইট ইস্যুতে অবেধনের ২ টি উপায় রয়েছে :-
- যদি আপনার ব্যাংক ASBA ( অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্টেড বই ব্লক অ্যামাউন্ট ) সাপোর্ট করে থাকে – তাহলে IPO অ্যাপ্লিকেশনের মতোই এই ক্ষেত্রেও abedon করতে পারবেন |
- যদি আপনার ব্যাংকে ASBA প্রক্রিয়াটির সুবিধা না থাকে তাহলে –
সেই ক্ষেত্রে আপনি সংস্থার আরটিএ (রেজিস্ট্রার এবং ট্রান্সফার এজেন্ট) এর সমন্বিত আবেদন ফর্ম (সিএএফ) এর কুরিয়ার পেয়ে যাবেন । অন্যথায় ব্রেকিং হাউসের সাথে নির্দিষ্ট সময় শেষের আগেই যোগাযোগ করে পদ্ধতির সম্পর্কে অবগত হয়ে নিন |
আপনি যদি ইক্যুইটি অ্যানালাইসিস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের Certification in Online Equity Research Analysis. কোর্সটি আপনার জন্য উপযুক্ত |
আশাকরি রাইট ইস্যু নিয়ে আপনার ধারণা আগের থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার হয়েছে – সুতরাং আপনি কি রাইট ইস্যুর অফারের অবেধন গ্রহণের জন্য প্রস্তুত ? আবেদন করবেন কি ?
কমেন্ট করে আমাদের অবশ্যই জাবেন |